কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক, জনবল ও ওষুধের সংকট চরমে পৌঁছেছে। পাঁচশত শয্যার বিশেষায়িত এই হাসপাতালে ন্যূনতম ২০০ চিকিৎসক প্রয়োজন হলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৭৭ জন। এর মধ্যে অনেকে ছুটি, প্রশিক্ষণ বা অন্য প্রশাসনিক কারণে নিয়মিত অনুপস্থিত থাকেন।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিভাগেও সংকট প্রকট। ২০০ জন কর্মীর প্রয়োজন থাকলেও রয়েছে মাত্র ৪০ জন- এর মধ্যে হরিজন সম্প্রদায়ের সদস্য মাত্র ৯ জন, যেখানে দরকার ছিল ১০০ জন। নিরাপত্তা পরিস্থিতিও একইভাবে নাজুক; ১৫০ জন আনসার সদস্য প্রয়োজন হলেও দায়িত্বে আছেন মাত্র ৩০ জন। এর মধ্যে শিফটে কাজ করছেন ১৮ জন, বাকিরা রান্না-বান্না বা অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকেন। নার্সের ক্ষেত্রেও একই চিত্র- ৫০০ জন প্রয়োজন হলেও কর্মরত মাত্র ১৫৮ জন।
এসব সংকটের কারণে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা নানান সমস্যায় পড়ছেন। হাসপাতালের ভর্তিকৃত সার্জারি ও অন্যান্য ওয়ার্ডের রোগী- মরফত আলী (৬৫), মুসা মিয়া (২৫), মঞ্জুরুল হক (৬৫) সহ অন্তত ২০ জন অভিযোগ করেন, হাসপাতালে শুধু দুই-একটি প্যারাসিটামল বা সাধারণ গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ছাড়া প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক, ইনজেকশন, গ্লাভস, স্যালাইনসহ অধিকাংশ জীবনরক্ষাকারী উপকরণ বাইরে থেকে বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে।
প্রশাসনিক সংকটও পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। ৫০০ শয্যার এই মেডিক্যালের পরিচালকের পদটি গত বছরের ডিসেম্বর থেকে শূন্য পড়ে আছে। হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদও দীর্ঘদিন ধরে খালি।
চিকিৎসা ব্যবস্থার অবনতিতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বেশ কয়েকবার মানববন্ধন ও আন্দোলন করেছেন। অনেকেই হাসপাতালটি সেনাবাহিনীর মাধ্যমে পরিচালনার দাবি জানালেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর এক্স-রে বিভাগের সময়সীমা দুপুর ১টা থেকে বাড়িয়ে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করা হয়েছে। প্যাথলজি বিভাগের সময়ও সন্ধ্যা ৬টা থেকে বাড়িয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত চালু রাখা হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকায় হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি চুরির ঘটনাও ঘটেছে বলে জানান তিনি। সম্প্রতি কোটি টাকার ‘হিস্টোপ্যাথলজি’ যন্ত্রটি হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ল্যাব ইনচার্জ তানভীর আহমেদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ওষুধ সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারের আর্থিক চাপ এবং ৫০০ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন ৭০০-এর বেশি রোগী ভর্তি থাকার কারণে চাহিদা পূরণে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।
""বি:দ্র: এই সাইটের কোন লেখা বা ছবি কপি করা আইনত দন্ডণীয়""
zahidit.com